ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

৯৩ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন, ৬ মাসের মধ্যেই মিলবে বিদ্যুৎ

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৯-১২-২০২৪ ০৪:২৫:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৯-১২-২০২৪ ০৪:২৫:০৮ অপরাহ্ন
৯৩ শতাংশ নির্মাণকাজ সম্পন্ন, ৬ মাসের মধ্যেই মিলবে বিদ্যুৎ
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর কথা থাকলেও গ্রিড (সঞ্চালন) লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় সহসাই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশার কথা হলো এ প্রকল্পের ৯৩ শতাংশ কাজই সম্পন্ন হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যেই উৎপাদনে যাবে এই প্রকল্পটি। এতে বিদ্যুতের সংকট বহুলাংশে কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 
জানা যায়, বছরখানেক আগেই চুল্লিসহ মূল অবকাঠামোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। বিগত বছরের অক্টোবরে পাঁচ দফায় রাশিয়া থেকে জ্বালানির (ইউরেনিয়াম) প্রথম চালানও রূপপুরে পৌঁছেছে। কিন্তু গ্রিডলাইন প্রস্তুত না হওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছরের মার্চে প্রথম ইউনিটের গ্রিড লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে উৎপাদনে যেতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। রূপপুরের প্রথম ইউনিটে ২০২৩ সালে ও দ্বিতীয় ইউনিটে ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরুর সময় নির্ধারণ করা হয়। 
এ প্রসঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান বলেন, ‘কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন ফুয়েল (ইউরেনিয়ামপূর্ণ দণ্ড) লোড করা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সঞ্চালন লাইন দরকার। আগামী মার্চে সঞ্চালন লাইন হলে ফুয়েল লোডিং ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আরও পাঁচ-ছয় মাস সময় লেগে যাবে। প্রথম ইউনিট চালুর এক বছর পর চালু হবে দ্বিতীয় ইউনিট। তবে সঞ্চালন লাইনের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজও পিছিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জ্বালানির সংকট মোকাবিলা, জ্বালানি রূপান্তর ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিকল্প নেই। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দীর্ঘ মেয়াদে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এটির নির্মাণে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে যত দেরি হবে, ততই কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয় বাড়বে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন যত আগে শুরু হবে, ততই রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দেশের বিদ্যুৎ সংকট কমবে। যত দেরি, তত ক্ষতি। আগামী বছরের মধ্যে এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু না হলে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে।’ 
জানা গেছে, বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অধীনে সঞ্চালন লাইন তৈরি করছে ভারতের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেইসি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ট্রান্সরেল লাইটিং লিমিটেড এবং লারসেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেড। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল।
এ প্রসেঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুর রশিদ খান বলেন, ‘প্রথম ছয় মাসে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু পরে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আন্দোলনের কারণে সারা দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়। সেজন্য সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজে ধীরগতি দেখা দেয়। আর ৫ আগস্টের পর কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। টানা তিন মাস কোনো কাজ না হওয়ায় আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি, যার ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রিড লাইন পুরোপুরি রেডি করা সম্ভব হয়নি। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে প্রথম ইউনিটের সঞ্চালন লাইনের কাজ পুরোপুরি শেষ করার টার্গেট রয়েছে। আমরা এখন পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ঐ সময়ের মধ্যেই লাইন রেডি হয়ে যাবে।’
২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থাকছে। এটির নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটম। ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বাজেটের রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে তৃতীয় প্রজন্মের ভিভিইআর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম দুটি ইউনিট রয়েছে।
 
বাংলা স্কুপ/ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে
 




প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ